Sunday, February 28, 2010

লিনাক্স ও আমাদের ধারনা

ইন্টারনেটের কল্যাণে লিনাক্সের নাম আমরা সবাই হয়ত দু-চারবার শুনেছি। কিন্ত আসলে জিনিসটা কী? তা জানার আগ্রহ আমাদের সবারই কমবেশি আছে। আমরা যারা কম্পিউটার ব্যবহার করি,তারা কম্পিউটার বলতেই বুঝি মাইক্রোসফটের উইনডোজ এক্সপি।কিংবা অধুনা ভিস্তা অথবা সেভেন। কিন্তু কম্পিউটার কি আসলেই তাই? তা জানতে কমপিউটার সম্পর্কে আরও একটু বলি। আমরা তো কম্পিউটারে বিভিন্ন কাজের জন্য বিভিন্ন সফটওয়্যার ব্যবহার করি,যেমন গান শোনার জন্য উইনডোজ মিডিয়া প্লেয়ার্,নেট ব্রাউজিং এর জন্য ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার,টাইপিং এর জন্য এমএস ওয়ার্ড। কিন্তু এসব সফটওয়্যার সহ পুরো কম্পিউটার পরিচালনা করে যে সফটওয়্যার, তার নাম অপারেটিং সিস্টেম। এটি আসলে কতগুলি প্রোগ্রাম বা সফটওয়্যারের সমষ্টি যা কম্পিউটারের বিভিন্ন হার্ডওয়্যারের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে তা আপনার ব্যবহারোপযোগী করে ও অন্যান্য সফটওয়্যার চলার পরিবেশ স্রষ্টি করে।উইনডোজও একটি অপারেটিং সিস্টেম।বিভিন্নরকম অপারেটিং সিস্টেম আছে। লিনাক্সও তেমনি একটি অপারেটিং সিস্টেম।আসলে এটি ঠিক অপারেটিং সিস্টেম নয়, এটি অপারেটিং সিস্টেমের মূল কাঠামো বা কর্ণেল। এটির সাথে আরও অনেক সফটওয়্যার যোগ করে সাধারনের ব্যাবহারপযোগী অপারেটিং সিস্টেম তৈরি হয়। ১৯৯১ সালেএটি আবিস্কার করেন লিনাস টোরভলস(Linus Torvalds)। এই কর্ণেলের ওপর বিত্তি করেই লিনাক্সভিত্তিক অনেক অপারেটিং সিস্টেম গড়ে উঠেছে যেগুলি সবই লিনাক্স।যেমন রেডহ্যাট, ফেডোরা, উবুন্টু ইত্যাদি। অর্থা‍‍‌ৎ লিনাক্স একক কোন অপারেটিং সিস্টেম নয়,লিনাক্সভিত্তিক সব অপারেটিং সিস্টেমই লিনাক্স নামে পরিচিত।প্রশ্ন আসতে পারে উইনডোজ মাত্র ১টি অপারেটিং সিস্টেম হলেও লিনাক্সের এত অপারেটিং সিস্টেম কেন?এর উত্তর হল, সব সফটয়্যারই তৈরি করা হয় কিছু কোড লিখে যাকে বলে সোর্সকোড।এই সোর্সকোড দেখেই পরবর্তিতে কেউ সফটওয়্যারটির পরিবর্তন,পরিবর্ধন,সংশোধন করতে পারে। কিন্ত অনেক কোম্পানীই তাদের ব্যাবসায়িক স্বার্থে এই সোর্সকোড গোপন রাখে।মাইক্রোসফটও উইনডোজের সোর্সকোড গোপন রেখেছে যেন তারা ছাড়া আর কেউ উইনডোজের পরিবর্তন না করতে পারে।এ ধরনের সফটওয়্যারকে বলে ক্লোজসোর্স সফটওয়্যার।পক্ষান্তরে লিনাক্সের সোর্সকোড উন্মুক্ত।যে কেউ এটি সংগ্রহ করে পরিবর্তন করতে পারে।এসব সফটওয়্যারকে বলে ওপেনসোর্স সফটওয়্যার।তাই লিনাক্সের এত বেশি ডিস্ট্রিবিউটর।সকলে সোর্সকোড সংগ্রহ করে নিজের সুবিধামত অপারেটিং সিস্টেম তৈরি করেছে।লিনাক্সের সবচেয়ে জনপ্রিয় ডিস্ট্রিবিউশন হল উবুন্টু। এটি ডেস্কটপ কম্পিউটারের জন্য লিনাক্সভিত্তিক সবচেয়ে জনপ্রিয় অপারেটিং সিস্টেম। এটি ডিস্ট্রিবিউট করেছে ক্যানোনিকাল লিমিটেড। 'উবুন্টু' শব্দটি আফ্রিকান জুলু ভাষা থেকে এসেছে, যার অর্থ অন্যর জন্য মানবতা।কবির ভাষায় "সকলের জন্য সকলে আমরা,প্রত্যেকে মোরা পরের তরে।"এটিই উবুন্টুর আদর্শ।
এখন প্রশ্ন জাগতে পারে উইনডোজের মত এত সুন্দর অপারেটিং সিস্টেম থাকতে উবুন্টু কেন? জবাব দেবার আগে একটা প্রশ্ন করি। আপনি কি জানেন আপনি কম্পিউটারে যে উইনডোজ ব্যবহার করছেন, তা ফ্রি না, কিংবা এর দাম ৫০-৬০টাকাও না। এক একটা জেনুইন উইনডোজের দাম কয়েকশ ডলার! আমরা যেটা ব্যবহার করি তা চোরাইভাবে ক্রাক করে কপি করা, যেটা ব্যবহার করা কপিরাইট আইনের লঙ্ঘন ও অপরাধ!
অর্থাৎ আমরা সবাই জেনে না জেনে চুরি করছি, কিন্তু এই চোরের অপবাদ ঘুচাবার সবচেয়ে সহজ উপায় উবুন্টু।এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।এমনকি আপনি এটি কপি করে যে কারো সাথে শেয়ার করতে পারবেন। কোন আইনগত বাধা নেই!আপনি ইচ্ছা করলে এর সোর্সকোডও পরিবর্তন করতে পারবেন।তাহলে ফ্রি অপারেটিং সিস্টেম থাকতে চুরি কেন?
লিনাক্সের সবচেয়ে সুবিধা এতে উইনডোজের মত ভাইরাসের ঝামেলা নেই। এটি এমনভাবে ডিজাইন করা যে ভাইরাস এতে আক্রমন করতে পারেনা।অর্থাৎ উবুন্টু উইনডোজের চেয়ে অনেক নিরাপদ।
আমরা উইনডোজে যেসব সফটওয়্যার ব্যবহার করি, তার অধিকাংশই উইনডোজের মত চোরাই। কিন্তু উবুন্টুতে উইনডোজের বিকল্প সব সফটওয়্যারই একদম ফ্রি। তাহলে এত সুবিধা থাকতে উইনডোজে কেন? ঘুরে আসুননা উবুন্টুর জগত থেকে।
উবুন্টু সম্পর্কে আরও জানতে কিংবা উবুন্টু ব্যবহার করতে ডাউনলোড করুন উবুন্টু সহায়িকা।[url]http://blog.manchumahara.com[/url]

,http://www.bdosn.org/publications/ubuntuGuide_9.10.final.pdf